মা ফাতেমা (র.আ.)–এর ঘর থেকে রওজা মোবারকের ইতিহাস
Category: Hajj / Umrah | Posted on: December 7, 2025
এক নূরভরা পবিত্র স্থানের হৃদয়স্পর্শী কাহিনি
পরিচয়
মদিনার মসজিদে নববী মুসলিম বিশ্বের পবিত্রতম স্থানগুলোর অন্যতম। আজ যে রওজা মোবারকের সামনে দাঁড়িয়ে লাখো মুসলিম সালাম পেশ করেন, সেই স্থানটির মূল ইতিহাস শুরু হয়েছিল নবী মুহাম্মদ ﷺ–এর কন্যা—মা ফাতেমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)–এর ছোট্ট, সরল একটি ঘর থেকে। সময়ের ধারায় সেই ঘর এবং নবীজি ﷺ–এর দাফনের স্থান একীভূত হয়ে আজকের অপরূপ রওজা শরীফে রূপ নিয়েছে।
🌸 হিজরতের পর ফাতেমা (র.আ.)–এর ঘর নির্মাণ
মদিনায় হিজরতের পর নবীজি ﷺ তাঁর কন্যা ফাতেমা (র.আ.)–কে একটি ছোট্ট ঘর উপহার দেন।
ঘরটি ছিল—
-
মাটির তৈরি দেয়াল,
-
খেজুরপাতার ছাউনি,
-
এবং অল্প কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
সরল হলেও ঘরটিতে ছিল নূর, শান্তি এবং বাবা–কন্যার গভীর বন্ধনের ছাপ।
ঘরটি ছিল উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)–এর চেম্বারের ঠিক পাশে। ফাতেমা (র.আ.)–এর ঘর ও নবীজি ﷺ–এর ঘর প্রায় লাগোয়া ছিল।
🌿 নবীজি ﷺ–এর স্নেহময় রুটিন
নবী মুহাম্মদ ﷺ ফাতেমা (র.আ.)–এর ঘরের দরজায় এসে প্রতিদিন বলতেন—
“আসসালামু আলাইকুম, আহলে বাইতি নুবুওয়াহ।”
অর্থ: হে নবুয়ার পরিবারের সদস্যগণ, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
এই অভ্যাস ছিল নবীজি ﷺ–এর গভীর স্নেহ ও সম্মানের প্রতীক।
মদিনার মানুষ এটি দেখতেন এবং উপলব্ধি করতেন বাবা-কন্যার অসাধারণ সম্পর্ক।
🌸 নবীজি ﷺ–এর ইন্তেকাল ও দাফন
১১ হিজরির সেই দিনটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য বেদনাময়।
নবীজি ﷺ ইন্তেকাল করার পর সাহাবিগণ আলোচনা করেন কোথায় তাঁকে দাফন করা হবে। তখন হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নবীজি ﷺ–এর বাণী স্মরণ করিয়ে দেন—
“যে নবী যেখান থেকে ইন্তেকাল করেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।”
এ কারণে নবীজি ﷺ–কে আয়েশা (র.আ.)–এর ঘরেই দাফন করা হয়—যা ছিল ফাতেমা (র.আ.)–এর ঘরের খুব কাছেই।
পরে হযরত আবু বকর (র.আ.) ও হযরত উমর (র.আ.)–কেও একই স্থানে দাফন করা হয়। ফলে এই ঘরটি ধীরে ধীরে ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম পবিত্র স্থানে পরিণত হয়।
🌿 মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ ও রওজা মোবারকের রূপ
সময়ের সাথে খলিফাগণ মসজিদে নববীর পরিধি বাড়াতে থাকেন। বিভিন্ন যুগে সম্প্রসারণের ফলে:
-
ফাতেমা (র.আ.)–এর ঘর,
-
আয়েশা (র.আ.)–এর ঘর,
-
এবং নবীজি ﷺ–এর দাফনস্থল
সবই একত্রিত হয়ে রওজা শরীফের অংশে পরিণত হয়।
আজ রওজার সবুজ গম্বুজ, সোনালি জালি ও ভেতরের নূরভরা পরিবেশ ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্মৃতিকে ধারণ করে আছে।
🌸 আজকের রওজা মোবারক—ইতিহাসের জীবন্ত স্মৃতি
বর্তমান রওজা মোবারকে রয়েছে—
-
নবী মুহাম্মদ ﷺ–এর পবিত্র কবর,
-
তাঁর বন্ধু ও প্রথম দুই খলিফা হযরত আবু বকর (র.আ.) ও হযরত উমর (র.আ.)–এর কবর,
-
এবং সেই ঘরের স্মৃতি যেখানে মা ফাতেমা (র.আ.) বসবাস করতেন।
একারণে রওজা মোবারক মুসলিম উম্মাহর কাছে শুধু একটি পবিত্র স্থান নয়—
এটি নবীজির পরিবার, স্নেহ, আদব ও নূরের ইতিহাসের মিলনস্থল।
🌿 মুসলিমদের মনে রওজার গুরুত্ব
বিশ্বের কোটি মুসলিম যখন রওজার সামনে দাঁড়ান—
তারা অনুভব করেন—
-
নবীজি ﷺ–এর নূরের সুবাস,
-
সেই পবিত্র ঘরের ইতিহাস,
-
এবং পরিবারের ভালোবাসায় তৈরি সেই সময়ের গল্প।
রওজা মোবারক মুসলিম হৃদয়ের সবচেয়ে কোমল, সবচেয়ে পবিত্র অনুভূতির নাম।
🌸 উপসংহার
মা ফাতেমা (র.আ.)–এর ছোট ঘর থেকে শুরু হওয়া এই ইতিহাস আজ রওজা মোবারকে পরিণত হয়েছে।
এটি শুধু একটি ঘরের পরিবর্তন নয়—
এটি বাবা–কন্যা, পরিবার, নূর এবং ইসলামের চিরন্তন ভালোবাসার ঝলক।